নারীর প্রতি বৈষম্য কোন ধর্ম দায়ী নয়,
আমাদের মানষিকতা দায়ী!
ইসলাম ধর্মমতে,মহাবিশ্বের জনক সৃষ্টির শুরুতে মানুষ হিশেবে আদম নামে একজন মানুষ বানিয়েছিলেন।
প্রাণের অস্তিত্ব চলমান রাখতে পরক্ষণে আদমের বাম পাঁজরের হাড় থেকে একজন মায়াবী তৈরী করেছিলেন।
মনেপ্রশ্ন জাগতে পারে আগে দেবী বানাননি কেন? তাইনা?
ভাই উত্তরটা আমি অনেক ভেবে দেখেছি পাইনি।না জানলেও আসলে সমস্যা নাই।
সবচে বড়কথা হচ্ছে সবার আগে দুজনের পরিচয় ই মানুষ।
মানুষ হিশেবে যতোটুকু সম্মান অধিকার পাওয়ার কথা নরনারী দুজনই তার অংশীদার। এক্ষেত্রে নো কম্প্রোমাইজ।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত প্রত্যেকেই শিশু।
মানুষ ই তার বড় পরিচয়।
কিন্তু বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের মানসিকতার অপমৃত্যু হয়ে যায়।
আমরা এবার পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা লালন করতে থাকি।
দেখাযায় একটি শিশু যখন ছেলে হয় তখন আমরা তাকে বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখলে মজা নেই,মজা দেই! আমাদের চোখের তখন বিন্দুমাত্র আপত্তি কাজ করেনা!
অথচ সেজায়গায় কন্যাসন্তান হলে যত্তসব নোংরা চিন্তার উদগিরন ঘটে!
পিচ্চিকাল থেকেই আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠে একজন কন্যা সন্তান হিশেবে, মানুষ নয়।
ফলে সে নিজেই হীনমন্যতায় ভুগে।
তার মস্তিষ্কে নানা প্রশ্ন জমাট বাধতে থাকে। কেনো তা সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ!
একসময় কেউ কেউ পুরুষবিদ্বেষী ও হয়ে উঠে! পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে বেছে নেয় অত্যাধিক স্বাধীন জীবন যে জীবন তাকে পরিবার,সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকেও অনেকসময় বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
এরজন্যে আমরা পুরুষরাই দায়ী।
কারণ সেই শিশুবয়স থেকেই আমরা নারীদের ভেবে আসছি লজ্জাবতী লতা,যার কাজ হচ্ছে খাওয়া-পরিবার পরিচর্যা-ঘুমানো-বিয়ে তারপর একদিন টুক করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো।
নারী নির্যাতন,ধর্ষণ সহ সবরকম নারীদের প্রতি সহিংসতারর জন্যে
আমাদের মানসিকতা ই দায়ী।
কিন্তু প্রত্যেক ধর্মেই নারীকে যথাযথ সম্মান দেয়া হয়েছে।
অথচ আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার জন্যে নারীদের জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ, গড়ে উঠে নারীবাদী নামক কিছু সুবিধাবাদী।
পবিত্র ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থে নারীদের জন্যে আলাদা একটা সূরা রয়েছে।
নারী শব্দটি ৫৭বার উচ্চারিত হয়েছে।
সূরা নিসায় বলাহয়েছে, “তোমরা নারীদের সাথে উত্তম আচরণ করো এবং উত্তম আচরণের শিক্ষা দাও।”
মহানবী হযরত কারীম স: বলেন,” যার কন্যাসন্তান রয়েছে এবং সে যদি তাকে ছেলেসন্তাননের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তাহলে তার জন্যে রয়েছে বেহেশত।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ ৭(সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।
মহানবী (সা.)-এর জামানার বিখ্যাত এক ঘটনার কথা আমরা জানি। মায়ের সেবা করার কারণে হজরত ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীর জামানায় থেকেও সাহাবি হতে পারেননি। একবার ওয়াইস করনি (রা.) নবীজির কাছে খবর পাঠালেন ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ, এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সঙ্গে সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি।’ নবীজি (সা.) তাঁর গায়ের একটি মোবারক জুব্বা ওয়াইস করনির জন্য রেখে যান। তিনি বলেন, মায়ের খেদমতের কারণে সে আমার কাছে আসতে পারেনি। আমার ইন্তেকালের পরে তাকে আমার এই জুব্বাটি উপহার দেবে। জুব্বাটি রেখে যান হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে। এবং প্রিয় নবী (সা.) বলেন, হে ওমর! ওয়াইস করনির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিয়ো।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।
বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যারা বিধবা নারীর ভরণ–পোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী। (বুখারি ও মুসলিম)।
রাসুলের একটি হাদিসে এসেছে, নারীকে সম্মান করার পরিমাপের ওপর ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনটি বিষয় নবী করিম (সা.)-এর জীবনে লক্ষণীয় ছিল—এক. নামাজের প্রতি অনুরাগ; দুই. ফুলের প্রতি ভালোবাসা; তিন. নারীর প্রতি সম্মান। (বুখারি ও মুসলিম)।
দেখাযাচ্ছে নারীদের সার্বিক দিক নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
একজন নারী কারো সন্তান,কারো বোন,কারো মা অথবা কারো স্ত্রী!
মোদ্দাকথা হচ্ছে তিনি একজন মানুষ।
মানুষ হিশেবে তার কিছু স্বাধীনতা রয়েছে।
এক্ষেত্রে কেউ তার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করার স্পর্ধা দেখাতে পারেনা।
যেমন একটা মেয়ে কি শাড়ি পরবে নাকি পরবেনা,জিন্স পরবে নাকি পাজামা পরবে, শর্টস পরবে নাকি বোরখা পরবে পুরোটাই তার পছন্দের স্বাধীনতা।
কোনো জোরজবরদস্তি করা যাবেনা।
কোনো ধর্মেই জোরজবরদস্তি কে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি।
ভারতীয় বিখ্যাত গায়ক, সুরকার,সংগীত পরিচালক, দুবারের অস্কারজয়ী শ্রদ্ধেয় এ আর রহমান তার মেয়েদেরকে পোশাক পরার ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন।কিন্তু তসলিমা নাস্রিন নামক নারীবাদী উনার মেয়ের পোশাক তথা বোরখা নিয়ে হেয় করার চেষ্টা করেছেন যা সম্পূর্ণ নারীবাদ বিরোধী।
এছাড়া,কেউ শর্টস পরে ঘুরলেও আপ্নার বিন্দুমাত্র অধিকার নেই তাকে নিষেধ করা,,পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।
পরিশেষে বলতে চাই,একজন মেয়েকে হেনস্থা করার আগে ভাবুন আপ্নি একজন মেয়ের পেটে দশমাস ছিলেন।
আপ্নার মত এমন আরেকজনকে জন্ম দিতে গিয়ে অনেকেই চির বিদায় নিয়েছে।
প্রতিটি নারীই মানুষ,ভোগ্য পণ্য নয়।
দয়াকরে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিবেন না।
তাদের ও রাগ-মায়া-মমতা-ভালোবাসা সর্বোপরি আবেগ আছে।সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার করুন।
দ্রোহ,মানবতা,প্রেম ও সাম্যের কবি নজরুলের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে পরিশেষে ঘোষণা করতে হয়,”বিশ্বের যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যানকর,অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
লেখক: জাকের পারভেজ
শিক্ষার্থী আইন, বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।