পেকুয়া প্রতিনিধি: পেকুয়ায় পুলিশ এবার নিল আ’লীগ ওয়ার্ড কমিটির সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা। পানি চলাচলকে কেন্দ্র করে ৩ মহিলার মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এর সুত্র ধরে প্রবাসীর স্ত্রী পুলিশ ম্যানেজ করে থানায় ধর্ষণ মামলা রুজু করে। মামলায় স্বামীর সৎভাই ওয়ার্ড আ’লীগের সাবেক সভাপতিকে এজাহার নামীয় আসামী করে। এ ছাড়া আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামী করে। পেকুয়া থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে।—
এ সময় নুর আহমদ (৫৯) নামক এক ব্যক্তিকে আটক করে। এ দিকে মারপিটের ঘটনায় থানায় ধর্ষণ মামলা রুজু করা হয়েছে। এ খবর এলাকায় চাউর হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে গ্রামে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে। বিক্ষুদ্ধ লোকজন মামলাটি মিথ্যা আখ্যায়িত করে এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে।
২৩ অক্টোবর (শুক্রবার) উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামে এ বিক্ষোভ অনুষ্টিত হয়। এ সময় মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ কাল্পনিক ধর্ষণ মামলা থেকে নিরীহ ২ ভাইকে নিষ্কৃতি ও দায়ী থেকে মুক্তি দিতে জোরালো দাবী জানানো হয়েছে। এমনকি তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ডসহ ও অপর নিরীহ ব্যক্তি নুর আহমদকে অহেতুক হয়রানির দায়ে পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদারের অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও জোর দাবী তোলানো হয়েছে। অন্যথায় গ্রামবাসী এর চুড়ান্ত জবাব দিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখারও ঘোষনা দেন।
স্থানীয় সুত্র জানায়, ২২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালীতে নুর আহমদের মেয়ে ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী তাসমিন সোলতানা ও প্রবাসী আবুল কাসেমের স্ত্রী রুজিনা আক্তারের মধ্যে মারপিট হয়। এ সময় রুজিনা আক্তারের ২ ছেলে আরিফুর রহমান বাবু ও তারেকুর রহমান মিজবাহ মায়ের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে যায়। মূলত মরিচ খেতের পানি প্রতিবন্ধকতাকে কেন্দ্র করে মারপিট হয়েছে। রুজিনা আক্তার পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
সৃষ্ট ঘটনায় রুজিনা আক্তার বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় একটি এজাহার প্রেরণ করেন। তবে মারপিটের ঘটনাকে ভিন্নখাতে উপস্থাপন করতে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে থানায় এমন এজাহার পৌছায়। পেকুয়া থানা পুলিশ ২৩ অক্টোবর একটি ধর্ষণ মামলা রেকর্ড করে। যার নং ১২/২০।
পেকুয়া থানা পুলিশ ২২ অক্টোবর রাতে নুর আহমদ নামক একজনকে পাহাড়িয়াখালী থেকে আটক করে। পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে থানায় ধর্ষণ মামলা রুজু হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে মামলায় কয়জনকে আসামী করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান ওসি। এ দিকে থানায় ধর্ষণ মামলা রুজু হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ধর্ষণ ঘটনাকে নাকচ করে ওই মামলা মিথ্যা ও কাল্পনিক হয়েছে এমন প্রশ্ন এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়।
এর প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর পাহাড়িয়াখালীতে বিপুল মানুষ জড়ো হন। তারা ওই মামলা প্রত্যাহারসহ নিরীহ ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধের দাবীতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। প্রায় ১ ঘন্টা সড়কে অবস্থান নেয়। মামলার বাদী রুজিনা আক্তারের ভাসুর ইব্রাহীম (৬০) জানান, রুজিনা আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। তাকে কেউ ধর্ষণ করেনি। জায়গার বিরোধ আছে। নুরুল আলম ও নুর আহমদ নিরাপরাধ। মারপিট হয়েছে মেয়েদের মধ্যে। এখানে এরা মোটেই জড়িত নন। বদিউল আলম (৭০) বলেন, অসহায় নুর আহমদকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে ভূল করেছে।
এ ধরনের জুলুম আল্লাহ বরদাশত করবেনা। ব্যবসায়ী আবুল হাসেম বলেন, নুর আহমদকে পুলিশ ছেড়ে দিতে চেয়েছিল। আসলে এখানে কোন ধর্ষণ হয়নি। নুরুল আলম ও নুর আহমদ আপন ভাই। মুলত জায়গার বিরোধ। কাঠ ব্যবসায়ী আনসার জানান, আমি ও নুরুল আলম একই স্থানে ব্যবসা করি। ঘটনার সময় আমরা ২ জন বারবাকিয়া বাজারে মসজিদে নামাজে ছিলাম। এত বড় অপবাদ ও মামলা রুজু করা মানে মানুষকে হয়রানি করা। পেকুয়া বিএমআই কলেজের ছাত্রী কলি আক্তার জানান, মারামারির সময় আমরা এখানে ছিলাম। মূলত মেয়েদের মধ্যে মারপিট হয়েছে। এখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।
১০ম শ্রেনীর ছাত্রী সাদিয়া আক্তার জানান, এটি মিথ্যা ঘটনা। রেজাউল করিমের স্ত্রী মুবিনা আক্তার, ছমি উদ্দিনের স্ত্রী শাহেনা বেগম জানান, জায়গা নিয়ে মেয়েদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। ধর্ষণ হয়নি এখানে। দিনের ঘটনা আমরাতো দেখেছি। সমাজ কমিটির সর্দার আবু তাহের কৌম্পানী জানান, ধর্ষণ ঘটনা হয়নি। জায়গার বিরোধ আছে। আমরা অনেকবার বৈঠক করেছি।
পাহাড়িয়াখালীর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিম উদ্দিন জিহাদী বলেন, সামান্য মারপিট হয়েছে। এখানে এত বড় মামলা হওয়ার মতো ঘটনা সংঘটিত হয়নি। ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি আবুল হোসেন শামা জানান, নুরুল আলম একজন ভাল মানুষ। ৩ নং ওয়ার্ড কমিটিতে সভাপতি ছিলেন। আসলে মামলার কথা শুনে আমি অবাক হয়েছি। নুর আহমদের স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম জানান, আমার স্বামী মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে। স্বামী জেলে গেছে এখন না খেয়ে উপোস থাকতে হবে। স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হক জানান, এটা শতভাগ মিথ্যা মামলা।
রুজিনা আক্তার ও নুর আহমদের মেয়ে ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী তাসমিনের মধ্যে মারামারি হয়েছে। তাসমিনকে কামড় দিয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে রুজিনা আক্তার। মারপিটের ঘটনায় কিভাবে ধর্ষণ মামলা এটা আমার বোধগম্য নয়। আমি সারারাত থানায় ছিলাম। ওসিকে বলেছি নুর আহমদকে আমার জিম্মায় ছেড়ে দেন। কিন্তু তিনি দিলেন ধর্ষণ মামলা। পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার জানান, একটি ধর্ষণ মামলা রেকর্ড হয়েছে। আসামী কয়জন সেটা বলা যাবেনা। মামলাটির তদন্ত চলছে।..